প্লান্টার ফ্যাসাইটিস (গোড়ালির ব্যথা) কি, কেন ও কিভাবে?

আপনার গোড়ালির তীব্র ব্যথার কারণ কি 'প্লান্টার ফ্যাসাইটিস'? জানুন এর উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

Team DSSI

9/2/20251 min read

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কয়েক কদম হাঁটতে গেলেই গোড়ালির নিচে তীব্র ব্যথা? অথবা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে? যদি এমনটা হয়, তবে সম্ভবত আপনি প্লান্টার ফ্যাসাইটিসে ভুগছেন। অবাক হবেন না, প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ১ জন এই সমস্যায় ভোগেন। এটি একটি খুব সাধারণ, কিন্তু অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা।

প্লান্টার ফ্যাসাইটিস আসলে কী?

আমাদের পায়ের পাতার ঠিক নিচে একটি শক্ত, ফিতা বা ব্যান্ড-এর মতো টিস্যু থাকে, যার নাম প্লান্টার ফ্যাসিয়া (Plantar Fascia)। এটি পায়ের পাতার আর্চ (ধনুকাকার অংশ) ধরে রাখতে সাহায্য করে। যখন এই টিস্যু বারবার বেশি ব্যবহৃত হয় বা এটির উপর অতিরিক্ত টান পড়ে, তখন এর মধ্যে ছোট ছোট ছিঁড়ে যাওয়া (মাইক্রো-টিয়ার), ফোলাভাব (ইনফ্ল্যামেশন) এবং তীব্র ব্যথা তৈরি হয়—একেই বলা হয় প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।

কেন হয় এই সমস্যা? কারা বেশি ঝুঁকিতে?

কিছু নির্দিষ্ট কারণ বা অভ্যাসের জন্য এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়:

  • অতিরিক্ত ওজন: শরীরের বাড়তি ভার সরাসরি প্লান্টার ফ্যাসিয়ার উপর চাপ ফেলে।

  • নিয়মিত দৌড়ানো বা নাচ করা: যেসব কার্যক্রমে গোড়ালিতে বারবার চাপ পড়ে।

  • দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা: শিক্ষক, নার্স, বা কারখানার কর্মীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

  • পায়ের গঠনগত সমস্যা: পা যদি চ্যাপ্টা হয় (Flat Feet) বা পায়ের আর্চ খুব বেশি উঁচু হয়।

  • বয়স: সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে এই সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বেশি।

  • লিঙ্গ: মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যা একটু বেশি দেখা যায়।

কীভাবে বুঝবেন আপনার প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হয়েছে?

এর প্রধান ও সবচেয়ে সুস্পষ্ট উপসর্গগুলি হলো:

  • সকালের প্রথম কদম: ঘুম থেকে উঠেই মেঝেতে পা রাখার সময় গোড়ালির নিচে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয়। কিছুক্ষণ হাঁটার পর ব্যথা কিছুটা কমে আসে।

  • দীর্ঘ কার্যকলাপের পর: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর বা বেশি হাঁটার পর ব্যথা বাড়ে।

  • ব্যথার প্রকৃতি: ব্যথা ধীরে ধীরে কমে আসে, তবে আবার পায়ে চাপ পড়লে বা ভারী কাজ করলে ফিরে আসে।

রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি
রোগ নির্ণয়

এই রোগ সাধারণত ডাক্তার শুধু শারীরিক পরীক্ষা করেই বুঝে নিতে পারেন। কখনো কখনো অন্য রোগের সাথে মিল থাকলে পার্থক্য করার জন্য এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। তবে সাধারণত অতিরিক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না।

চিকিৎসা

সুখবর হলো—বেশিরভাগ মানুষই সহজ কিছু চিকিৎসা এবং অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

১. প্রাথমিক চিকিৎসা

প্রথমে যা করা হয়:

  • ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া।

  • নিয়মিত পায়ের পেশি টান দেওয়ার ব্যায়াম (স্ট্রেচিং)

  • রাতে বিশেষ স্প্লিন্ট ব্যবহার।

  • প্রয়োজনে স্থানীয় স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া (সর্বাধিক কার্যকরী)।

২. দ্বিতীয় ধাপে (বিশেষ ক্ষেত্রে)
  • শকওয়েভ থেরাপি (এক ধরনের শব্দ তরঙ্গের চিকিৎসা, যা দ্রুত ভালো হতে সাহায্য করে)। আমাদের দেশে এই চিকিৎসার সুযোগ কম।

৩. শেষ উপায় (অত্যন্ত বিরল)
  • অস্ত্রোপচার (অপারেশন) – তবে ১০০ জনের মধ্যে ৫ জনেরও কম মানুষের এই অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

কীভাবে এই সমস্যা এড়ানো যায়?

প্রতিরোধের জন্য জীবনযাত্রায় কিছু সহজ পরিবর্তন আনুন:

  • দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে না থাকা

  • ওজন কমানো

  • হাঁটা বা দৌড়ানোর আগে পায়ের ব্যায়াম (স্ট্রেচিং) করা।

  • শক্ত মেঝেতে খালি পায়ে না হাঁটা

  • প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট বরফ সেঁক দেওয়া

  • নরম জুতা পরা

  • একই স্যান্ডেল বেশি দিন ব্যবহার না করা। প্রয়োজনে জুতার মধ্যে হিল কুশন (Heel Cushion) ব্যবহার করা।

👉 বেশিরভাগ মানুষই ওষুধ, ব্যায়াম, ইনজেকশন আর সহজ কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো হয়ে যান।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুনঃ

ডা. শেখ সাদিউল ইসলাম

Orthopaedics, Trauma & Spine Specialist

সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ

ইনসাফ বারাকাহ কিডনি এন্ড জেনারেল হাসপাতাল

01886-442286